Skip to main content

রিমান্ড কি? রিমান্ডে কখন ও কেনো নেওয়া হয়? আদালতের নির্দেশনা কি?





 



রিমান্ড বলতে কি বুঝি? আর কখন রিমান্ডে দেওয়া হয়?:

রিমান্ড হল কোন আমলযোগ্য অপরাধে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোন আসামীকে পুলিশি হেফাজতে আটক রাখা। যাকে আটক করা হয়েছে তাকে সন্দেহের ভিত্তিতেও আটক করা যেতে পারে। ফৌজদারী কার্যবিধিতে রিমান্ড শব্দের ব্যবহার নেই, Detention বা আটক ব্যবহার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করে ২৪ ঘন্টা আটক রাখা যাবে। তারপর আটককৃত ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট যদি প্রমানিত হয় আটককৃত ব্যক্তি নির্দোষ তবে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে মুক্তি দিবেন। যদি প্রমান হয় আটককৃত ব্যক্তি অপরাধী বা আরও তথ্য উদঘাটন প্রয়োজন আছে তবে তিনি রিমান্ডের সময় বাড়াতে পারেন। তবে সময় ১৫ দিনের বেশি হবে না। আর রিমান্ডে মারধোর করার কোন বিধান নাই। ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৬৭ ধারার অধিনে ইনভেস্টিগেশন অফিসার এই অবেদন করবে।


♣কোন কারণে রিমান্ডে নেয়া যায়

★যদি কোনো মামলায় প্রকৃত আসামীর পরিচয় না থাকে, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন কাউকে রিমান্ড চাইলে।

★কোনো মামলায় অনেক আসামী রয়েছে তাদের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেলে অন্য আসামীদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে।

★অনেক ক্ষেত্রে ঘটনার উৎস মামলায় উল্লেখ থাকে না, আসামী গ্রেফতারের পর ঘটনার উৎস জানার জন্য।

★অনেক মামলায় ঘটনার ক্লু উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট আসামীকে রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

রিমান্ড মঞ্জুরের সময় সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

রিমান্ডে পুলিশের আচরন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিগত ২০০৩ সালে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট রিমান্ডে পুলিশের আচরন সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন। যাহা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • কাঁচের দেয়াল বিশিষ্ট কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে
  • জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে আসামির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে
  • প্রত্যেকবার রিমান্ডের মেয়াদ অনধিক ০৩ দিন হবে
  • কাঁচের দেয়াল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আসামির আইনজীবী ও আত্মীয়-স্বজনদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

এছাড়াও রিমান্ড প্রশ্নে মানবাধিকার লঙ্গনের ও পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগের সুর শোনা যায়। ২৭ এপ্রিল, ২০০৩ সাল, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ প্রচলিত আইন সংশোধনের নির্দেশ দেন। ব্লাস্ট ও কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার রিমান্ড প্রশ্নে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫৪ ও ১৬৭ এর অপব্যবহার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশনা দেয়া হয়। যাহা আপিল বিভাগ স্থগিত করেনি।

নির্দেশনায় ছিল:

  • আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্যে পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।
  • কাউকে গ্রেফতার দেখানোর সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
  • গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে।
  • গ্রেফতারকৃতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ।
  • গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে পুলিশকে।
  • বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে যদি কাউকে আটক করা হয় তাহলে আটক ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।
  • আটক ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
  • জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের কাঁচনির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।
  • কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে,তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।
  • জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ঐ ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে।
  • পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ঐ ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ড বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
  • পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে।
  • পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয়, ঐ ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এই নির্দেশনাগুলোই চুড়ান্ত। তা আপিল বিভাগেও বহাল। এই নির্দেশনাগুলোর ব্যতিক্রম আদালত অবমাননার শামিল। মূলতঃ হেফাজতে নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যেই এই নির্দেশনা। তবে একটা বিষয় জানা দরকার, রিমান্ড মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে আদালত বাধ্য নন। উপযুক্ত কারন ও যুক্তি সাপেক্ষে আদালত তা মঞ্জুরের আদেশ দিতে পারেন। অনেক সময় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশও আদালত দিয়ে থাকেন। সুতরাং রিমান্ড হল আমলযোগ্য অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পুলিশ হেফাজতে আদালতের অনুমতিক্রমে নেয়া!


মোঃ মাজহারুল ইসলাম 

আইন বিভাগ 

ইশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ।


Comments

Popular posts from this blog

বিনা পরোয়ানায় পুলিশের গ্রেফতার ক্ষমতা ও করণীয়?